সকাল ৬ টা। তারাতারি ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম সাথে কিছু কাগজ! সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে প্রতিদিনের মত আজও বেড়িয়ে পড়লাম! আজকেও প্রতিদিনের মত ৩ টা ইন্টারভিউ আছে!জানি কাজ হবে না তবুও ব্যর্থ চেষ্টা আর জুতার তলা ক্ষয় করা! তবুও তো হার ছেড়ে দিলে চলবে না! কারন আমরা মধ্যবিত্ত! আমাদের হাল ছেড়ে দিতে নেই! লড়াই করতে হয় কঠিন যুদ্ধে জয়ী হতে হয় তবেই পেটে পড়ে কিছু খাবার! রাস্তায় দাড়িয়ে আছি! মোবাইলের স্কিনে সময় টা দেখে নিলাম! রিকশায় গেলে ১০ মিনিট! রিকশাওয়ালা মামাকে দিতে হবে ২০ টাকা!আর হেটে গেলে লাগবে ৩০ মিনিট সামনের টংয়ের দোকানে দিতে হবে ৮ টাকা! হাতে সময় আছে বেশ কিছুই! ৮টায় ইন্টারভিউ!কোন কিছু না ভেবে হাটা শুরু করে দিলাম! ১২ টাকা বাচাতে মধ্যবিত্তদের একটু কষ্ট করতেই হয়! সামনেই মামা চায়ের টং ! না আমি চা খাই না! আসলে খাই না বললে ভুল হবে খাই তবে মাসের শুরু তে! এখন মাসের প্রায় শেষ হাতের টাকা অপচয় করা যাবে না! তাই হিসাব করে চলতে হয়! দোকানের সামনে গিয়ে ঝুলন্ত প্যাকেট থেকে একটা কেক বের করে খাওয়া শুরু করলাম! তারপর পেট পুরে পানি খেয়ে তিন টাকার ডারবি ঠোটে ধরিয়ে মামা কে টাকা দিয়ে হাটা শুরু করলাম! এতেই চলবে এক দুপুর! মাঝে মাঝে রাস্তার পাশের ফুটপাত থেকে ২ টাকার ১ গ্লাস পানি হলেই চলবে! আজকে ২৩ তারিখ মাস শেষ হতে আরও ঢের সময়! একটু তো হিসাব করে চলতেই হবে! না হলে কি মধ্যবিত্ত দের খাতায় নাম থাকবে? অনেকক্ষণ ধরে ওয়েটিং রুমে বসে আছি! এটা নতুন কিছু না প্রতিদিন এমনি থাকতে হয়!
একটু পর ডাক পড়লো! ভিতরে যেতেই সবাই তাকিয়ে আছে মনে হয় চিড়িয়াখানা থেকে সদ্য বের হওয়া জন্তু আমি! পরিক্ষায় পাশ করলাম! এবার আসলো টাকা বা মামা খালু বিষয় দুইটাই আমার নেই!রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম! পিচ ডালা রাস্তায় হাটছি! কঠিন পাথরের আঘাতে আগেই জুতার ফিতা টা ক্ষয়ে গেছিলো!খেলাম হুচট ব্যাস্ তাতেই হয়ে গেলো! পায়ের বুড়ো আঙ্গুল টা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে কিন্তু তাকে কোন আপসোস নেই! যত আপসোস পায়ের জুতাটার জন্য! যার গুষ্টির সষ্টি পুজা হয়ে গেলো! মুখ থেকে একটা থৃথু নিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের মাথা লাগিয়ে আবার চলা শুরু করলাম! সামনেই একটা মুচির দোকান ! আগের বারও এখন থেকে সেলাই করে নিয়েছিলাম !সেই বারই বলেছিলো জুতাটা যেন পাল্টাই ! ওনার কথার উওর না দিয়ে শুধু হেসেছিলাম ! আবার তার দোকানের সামনে...
- কি বাবা এখনো জুতাটা বদল হয় নি? আমাকে দেখতেই কথাটা বললো !
- না আসলে সময় হচ্ছে না! আর পকেটের অবস্খাও খুব খারাপ! তো তাই আর কি!
- তবে এই ভাবে আর কত দিন?
- মনে হয় না আর বেশি দিন চলবে! এবার বদল করতেই হবে। নানান কথার মাঝে খুব মন দিয়ে জুতাটা সেয়াল করে দিলো ! হাতে ৫ টাকা ধরিয়ে দিয়ে আবার হাটা শুরু করলাম ! ৫ মিনিট হাটলেই একটা বড় কোম্পানি! সেখানেই ৯টায় একটা ইন্টারভিউ আছে ! প্রতিবারের মত রুমে গেলাম!একেক জন একেক প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ! যতসাধ্য উওর দিচ্ছি! ওই যে পরের ধাপ টা টাকা না হয় মামা খালু! তাই উঠে আসছি! হঠাৎ পিছনে ঘুরে বললাম,
- এমন একটা প্রানীর নাম বলেন, যে কি না ডিমও দেয় আর বাচ্চাও পাড়ে !
সবার মুখ কালো হয়ে গেলো প্রশ্নটা শুনে!
মনে মনে হাসলাম!
- কি হলো খুব তারা নাকি?
চলে আসছি তখনি একজন প্রশ্ন করলো চেয়ার থেকে উঠে!
- হৃমমম একটু তারা ! আরও একটা কোম্পানি তে ইন্টারভিউ দিতে হবে!
তারপর টিউশনি আছে!
- কিন্তু উওর টা?
- কিসের?
- যেটা প্রশ্ন করলেন সেইটার!
- আচ্ছা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার যেতে হবে! বলেই বাইরে চলে আসলাম! হা হা হা হা মাথাটা খারাপ করে দিয়ে এসেছি ! এবার বুঝুক যতসব আজেবাজে প্রশ্ন করলে কেমন লাগে! ২ টায় একটা টিউশনি আছে! আর ১২ টায় ইন্টারভিউ ! পাশের চায়ের দোকানে বসলাম ! ৩ টাকার বিস্কুটের সাথে পানি ফ্রি ! খেলে মন্দ হয় না পেটেও তো খুদা লাগে নাকি? তিন টাকার একটা বিস্কুটের সাথে পানি পেলাম! রিকসার জন্য অপেক্ষা করছি! আর হাটতে ভালো লাগছে না! দুপুরের কড়া রোদ টা ইদানিং সহ্য হচ্ছে না !১০ টাকার ভাড়া দিয়ে যদি রিকসার হুড় টা তুলে দিয়ে যাওয়া যায় মন্দ হয় না! এখনকার যুগে রিকসা পাওয়াও খুব কষ্টকর ! ৪ মিনিট কড়া রোদে দাড়িয়ে থাকার পর রিকসার দেখা মিললো! হুড় টা তুলে দিলাম

Comments

Popular posts from this blog